ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর শনিবার, ২০২৪ || ৭ পৌষ ১৪৩১
good-food
১০০১

ড. জোহার মৃত্যু গণঅভ্যুত্থানকে প্রভাবিত করে 

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৩৯ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৮ ফেব্রুয়ারি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ১৯৬৯ সালের এ দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা পাকিস্তানি মিলিটারির হাতে শহীদ হন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। ড. জোহার মৃত্যু ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানকে প্রভাবিত করে। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনকে বেগবান করে।

 

স্বৈরাচার আইয়ুব খানের শাসনকালে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থাপিত ৬ দফা দাবি এবং তার বিরুদ্ধে আনা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন। সার্জেন্ট জহুরুল হককে ঢাকা সেনানিবাসে ১৫ ফেব্রুয়ারি গুলি করে হত্যা করা হয়। 


এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ফলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আর প্রাদেশিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। স্থানীয় জেলা প্রশাসন রাজশাহী শহরে ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের মিছিল-মিটিংয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরদিন ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন নাটোর রোডে পরিকল্পিতভাবে আন্দোলন দমাতে স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। 

 

সেদিন সকাল থেকেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। উত্তেজিত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার প্রস্তুতি নেয়। তা মোকাবিলায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে প্রস্তুত রাখা হয়। এ পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন হাদির সঙ্গে ড. জোহা কথা বলার জন্য এগিয়ে যান এবং তাকে অনুরোধ করেন যেন পাকিস্তানি মিলিটারিদের তরফ থেকে কোনো ধরনের মারাত্মক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। 


মেইন গেট সংলগ্ন নাটোর রোডে ছাত্রদের ঢল নামতে শুরু করলে পাকিস্তানি মিলিটারি বাহিনী তাদের ওপর গুলি করতে উদ্যত হয়। তখন ড. জোহা হাত উঁচু করে পাকিস্তানি মিলিটারিদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, 'প্লিজ, ডোন্ট ফায়ার! আমার ছাত্ররা এখান থেকে এখনই চলে যাবে ...'! 


এসময় সেনা কর্মকর্তারা ড. জোহাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেছিলেন। বলেছিলেন, তিনি 'রিডার'। সেনা কর্মকর্তারা শুনেছিলেন 'লিডার'। ড. জোহা সেনা সদস্যদের শান্ত থাকতে আহ্বান করেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী সেদিন ড. জোহার অনুরোধ না শুনে বরং তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, রাইফেল দিয়ে গুলি করে তাকে আহত করে। 

 

সেদিন ব্যারিকেড থাকার কারণে পথিমধ্যেই অনেক দেরি হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরে অপারেশন টেবিলে ড. শামসুজ্জোহা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকা, রাজশাহীসহ সারাদেশের মুক্তিকামী জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কঠোর প্রতিরোধ ও তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। 


এ প্রতিরোধ ও আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করলে পাকিস্তানি বাহিনী দুর্বল হয়ে পড়ে। ড. জোহার মৃত্যুর ঘটনায় দেশের চলমান মুক্তির সংগ্রাম আরও বেগবান হয়ে ওঠে। ফলে তৎকালীন সরকার নিরুপায় হয়ে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষকের আত্মাহুতি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। ড. জোহা নিজ জীবনকে তুচ্ছ করে ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছেন।